বাংলাদেশের সংবিধানে তৃনমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য স্থানীয় সরকারকে প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান এবং একই সাথে জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশের সংবিধানে স্থানীয় সরকার সম্পর্কে ৪টি অনুচ্ছেদ রয়েছে (অনুচ্ছেদ ৯, ১১, ৫৯ এবং ৬০)৷ এসব অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা ও কার্যকারিতা বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে৷
সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, "রাষ্ট্র সংশিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে উত্সাহ দান করবেন এবং এই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহে কৃষক, শ্রমিক এবং মহিলাদেরকে যথাসম্ভব বিশেষ প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া হবে৷" এ অনুচ্ছেদে কৃষক, শ্রমিক এবং নারীদের সফল অংশগ্রহনের কথা বলা হয়েছে৷
১১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে৷"এখানে জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিধান রাখা হয়েছে৷
৫৯(১) নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, "আইন মোতাবেক নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হবে৷"
অনুচ্ছেদ ৫৯(২)-তে বলা হয়েছে, "এই সংবিধান ও অন্য কোন আইন সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা যেরূপ নির্দিষ্ট করবেন এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় উল্লেখিত অনুরূপ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান যথোপযুক্ত প্রশাসনিক একাংশের মধ্যে সেইরূপ দায়িত্ব পালন করবেন এবং অনুরূপ আইনে নিম্নলিখিত বিষয় সংক্রান্ত দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে:
(ক) প্রশাসন ও সরকারী কর্মচারীদের কার্য;
(খ) জনশৃঙ্খলা রক্ষা;
(গ) জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন৷
উপরোক্ত অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল স্তরে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির এবং এ সকল প্রতিষ্ঠানকে সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে৷
৬০ নং অনুচ্ছেদে "স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্থানীয় প্রয়োজনে কর আরোপ করার ক্ষমতাসহ বাজেট প্রস্তুতকরণ এবং নিজস্ব তহবিল রক্ষনাবেক্ষণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে৷" এ অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক ক্ষমতা প্রদানের বিধান রাখা হয়েছে৷
সুতরাং দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান শক্তিশালী স্থানীয় সরকার কাঠামোর জন্য নির্দিষ্ট এলাকার স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমম্বয়ে গঠিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কাঠামো নির্ণয় করে দিয়েছে৷ যেখানে কৃষক, শ্রমিক ও নারী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই প্রতিষ্ঠান গঠিত হবে৷ স্থানীয় সরকারের ক্ষমতাও এইভাবে নির্নয় করা হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি প্রশাসনিক কাঠামোর ক্ষমতা বিধিমোতাবেক স্থানীয় সরকার কাঠামোর কাছে ন্যস্ত থাকবে৷ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রশাসনিক, বিচারবিভাগীয়, আর্থিক, উন্নয়নমূলক ভূমিকা প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হবে৷ এই স্বায়ত্তশাসন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে শুধু সুশাসনে অবদান রাখবে না বরং উত্তম সেবা প্রদানের মাধ্যমে কর্মসূচিসমূহের ব্যবস্থাপনায় অধিক সাফল্যের নিশ্চয়তা বিধান করবে৷ এর মাধ্যমে জনগন দেখতে পাবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কতটুকু কাজ করছে৷
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস